প্রত্যয় ধর্ম ডেস্ক:অল্পে তুষ্ট থাকা নবী-রাসুলদের গুণ। আর অল্পতুষ্টিতে নিহিত প্রকৃত সুখ ও সফলতা। কিন্তু আমাদের মাঝে তা নেই। আছে শুধু ভোগবিলাস আর অপচয়। আমরা সম্পদের প্রাচুর্যকেই মনে করি সচ্ছলতা। অথচ প্রকৃত সচ্ছলতা হলো, হৃদয়ের সচ্ছলতা। একদিন রাসুল (সা.) হজরত আবু জরকে (রা.) বললেন, আবু জর! সম্পদের প্রাচুর্যকেই সচ্ছলতা মনে কর? আবু জর (রা.) বললেন, জি ইয়া রাসুলাল্লাহ। রাসুল (সা.) এরপর বললেন, তাহলে তুমি সম্পদের স্বল্পতাকে দারিদ্র্য মনে কর? তিনি বললেন জি ইয়া রাসুলাল্লাহ। রাসুল (সা.) বললেন, আসলে প্রকৃত সচ্ছলতা তো হৃদয়ের সচ্ছলতা। আর হৃদয়ের দারিদ্র্যই আসল দারিদ্র্য। (ইবনে হিব্বান : ৬৮৫)
আমাদের আশপাশে এমন অনেক ধনী আছে যাদের কণ্ঠে ভেসে আসে নেই কিংবা আরও চাই এই আক্ষেপ, যাদের পেরেশানি আকাশচুম্বী। রাতের পর রাত কেটে যায় নিদ্রাহীন একটাই চিন্তা আরও লাগবে। এটাই কি সুখ? আবার এমন মানুষও আছে যারা দিন এনে দিন খায়। এতেই তাদের পরম সুখ। নেই কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন এবং আরও চাইয়ের তৃষ্ণা। আছে শুধু অল্পে তুষ্টির মতো এক মহাগুণ। দুনিয়ায় জীবনযাপনের তাগিদে টাকা-পয়সা তো লাগেই এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘নারী, সন্তান, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য আর চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদিপশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব ইহজীবনের ভোগ্যবস্তু।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৪)
আমাদের মাঝে অল্পে তুষ্টি না থাকার কারণে আজ আমরা হারাম পদ্ধতিতে রিজিক তালাশ করি অথচ নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, হে লোক সকল, আল্লাহকে ভয় করো আর রিজিক অন্বেষণে সহজতা অবলম্বন করো। কারণ কারও জন্য নির্ধারিত রিজিক পূর্ণরূপে গ্রহণ করার পূর্বে কিছুতেই তার মৃত্যু হবে না। তাই আল্লাহকে ভয় করো এবং জীবিকা অন্বেষণে সহজতা অবলম্বন করো, যা কিছু হালাল তা গ্রহণ করো আর যা কিছু হারাম তা বর্জন করো। (ইবনে মাজাহ : ২১৪৪)। এই হাদীস থেকে বুঝে আসে রিজিক হারাম পদ্ধতিতে তালাশ করা যাবে না এবং তালাশের ক্ষেত্রে খুব বেশি পীড়াপীড়ি করার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তায়ালা হালাল পন্থায় যা দেন তাতেই তৃপ্ত থাকা। আর এটাই সফলতার প্রতীক।
অন্য হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, আদম সন্তানের কেউ যদি দুই উপত্যকা ভর্তি সম্পদের মালিক হয় তাহলে সে আরেক উপত্যকা সম্পদের তালাশ করতে থাকে। কেবল মাটিই আদম সন্তানের উদর পূর্ণ করে দিতে পারে। (বোখারি : ৬৪৩৬)
সম্পদের প্রতি এ অস্থির আকাক্সক্ষাই মানুষের স্বভাব। তবে এ স্বভাব আর স্বাভাবিকতাকে যারা জয় করতে পারে এবং নিজের যা আছে তা নিয়ে পরিতৃপ্ত থাকে। তাদের জন্য দুনিয়াটা হয়ে যায় সুখের নীড়। এভাবে তৃপ্ত থাকাকেই অল্পে তুষ্টি বলে। হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) আপন ছেলেকে উপদেশ দিয়েছেন, বাবা শোনো, যখন কোনো কিছুর তালাশ করবে তখন অল্পে তুষ্টি নিয়ে তালাশ করবে। আর যদি তোমার অল্পে তুষ্টি না থাকে তাহলে কোনো সম্পদই তোমার কোনো কাজে আসবে না। (আলমুজাল্লাতু ওয়া জাওহিরুল ইলম : ১১১০)
রাসুলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেন, সেই সফল, যে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে, প্রয়োজন পরিমাণ রিজিক পেয়েছে। আর আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা দিয়েই তাকে তুষ্ট রেখেছেন। (মুসলিম : ১০৫৪)। সুতরাং অল্প সম্পদে কেউ যদি সফল হতে চায়, তার জন্য আবশ্যক হলো ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে নিজের যা আছে তা নিয়ে পরিতৃপ্ত থাকা। আল্লাহ পাক আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।